![]() |
It's Zia |
মাশরুম আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যের প্রয়োজনীয় উপাদান যেমন প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ পদার্থে পূর্ণ। পুষ্টির ক্ষেত্রে মাশরুম সবচেয়ে ভালো। উপরন্তু, চর্বি এবং কার্বোহাইড্রেটের মতো খাদ্য উপাদানের আধিক্য যা আমাদের জটিল রোগের দিকে নিয়ে যায়, মাশরুমে প্রায় অনুপস্থিত। এটি ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, অ্যামিনো অ্যাসিড এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। এই উপাদানগুলো ডায়াবেটিস, ক্যান্সার ইত্যাদি প্রতিরোধে এবং ওজন কমাতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আজ আমরা এই মাশরুমের পুষ্টিগুণ ও বিভিন্ন উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জানবো।
মাশরুমের পুষ্টিগুণ
মাশরুমের পুষ্টিগুণ যেহেতু আমরা প্রতিদিন যেসব খাবার খাই তার থেকে তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এটি শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টির চাহিদা পূরণ করে শরীরকে সুস্থ রাখতে খুবই সহায়ক। মাশরুমে মানবদেহের জন্য প্রয়োজনীয় ৯টি অ্যামিনো অ্যাসিডের প্রতিটি থাকে। যেহেতু প্রোটিন সমৃদ্ধ মাশরুমে ক্ষতিকারক চর্বি থাকে না, তাই নিয়মিত মাশরুম খেলে স্থূলতা, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ ইত্যাদির ঝুঁকি কমে। একটি গবেষণায় দেখা গেছে ২৫-৩৫গ্রাম প্রোটিন, ৫৭-৬০গ্রাম ভিটামিন এবং ৫-৫গ্রাম। প্রতি ১০০গ্রাম মাশরুমে ৬গ্রাম খনিজ, শর্করা, ৪-৬গ্রাম উপকারী চর্বি পাওয়া যায়। এতে ফাইবারের পরিমাণও খুবই সন্তোষজনক এবং এর পরিমাণ প্রায় ১০-২৮%। এই পরিমাণ অন্যান্য খাবারের তুলনায় অনেক বেশি। শুকনো মাশরুমে ৫৭-৬০% ভিটামিন এবং খনিজ থাকে যা আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষায় অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতেও এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়ামের মতো গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের উপস্থিতির কারণেও মাশরুম শরীরকে রক্ষা করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
মাশরুম খাওয়ার পদ্ধতি
মাশরুম শুধু খেতেই সুস্বাদু নয়, আমাদের স্বাস্থ্যের জন্যও খুবই উপকারী। তাই প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় মাশরুম অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। তবে আবর্জনায় জন্মানো মাশরুম না খেয়ে শুধু চাষ করা মাশরুম খেতে হবে। এটি ভাজা, স্যুপ বা রান্না বা সালাদ হিসাবে খাওয়া যেতে পারে। ফুটন্ত গরম পানিতে কাঁচা বা শুকনো মাশরুম ১৫থেকে ২০মিনিট ভিজিয়ে রাখুন, ভালো করে ধুয়ে পানি ফেলে দিন। মাশরুম ভাজা বা সবজির মতো রান্না করা যায়। এছাড়া তরকারি বা মাছ-মাংস দিয়ে রান্না করে খাওয়া যায়।
মাশরুমের বিভিন্ন স্বাস্থ্যকর উপকারিতা
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি
যেহেতু মাশরুমে প্রাকৃতিকভাবে সর্বাধিক ভিটামিন এবং খনিজ এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে, তাই তারা মানবদেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। মাশরুমে রয়েছে পলিফেনল এবং সেলেনিয়াম নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা মানবদেহের জন্য অপরিহার্য, যা শরীরকে কিছু মারাত্মক রোগ যেমন স্ট্রোক, স্নায়ুতন্ত্রের রোগ এবং ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে।
কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ
মাশরুমে রয়েছে ইরিটাডেনাইন, লোভাস্ট্যাটিন, এন্টাডেনাইন, কাইটিন এবং ভিটামিন বি, সি এবং ডি, যা কোলেস্টেরল কমানোর অন্যতম উপাদান। নিয়মিত মাশরুম খেলে উচ্চ রক্তচাপ কমে। এতে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। এছাড়াও এতে সোডিয়ামের পরিমাণ খুবই কম যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে এবং হার্টের অন্যান্য কাজ করতে সাহায্য করে।
হজমে ও ওজন নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
মাশরুমে থাকা উচ্চমাত্রার ফাইবার পেট বেশিক্ষণ ভরা রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করে। ফলে এই মাশরুম শরীরের ওজন কমাতে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে। এতে থাকা ফাইবার এবং এনজাইম হজমেও সাহায্য করে। এটি অন্ত্রে উপকারী ব্যাকটেরিয়ার কার্যকারিতা এবং কোলনে পুষ্টির শোষণ বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই উচ্চ চর্বিযুক্ত লাল মাংসের পরিবর্তে মাশরুম খাওয়া আপনার ওজন কমাতে সাহায্য করতে পারে।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ
প্রোটিন, ফাইবার, ভিটামিন ও মিনারেল সমৃদ্ধ মাশরুম ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। নিয়মিত মাশরুম খেলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া মাশরুমে এনজাইম এবং প্রাকৃতিক ইনসুলিন থাকার কারণে এটি শরীরের অতিরিক্ত চিনি ভেঙে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা দূর
রক্তে আয়রনের পরিমাণ খুব কম হলে এবং মানসিক অবসাদ, মাথাব্যথা এবং হজমের সমস্যা হলে অ্যানিমিয়া হয়। মাশরুম আয়রন সমৃদ্ধ হওয়ায় রক্তস্বল্পতা রোগীদের জন্য আশীর্বাদ। তাই খাবারে নিয়মিত মাশরুম রাখলে রক্তস্বল্পতার ঝুঁকি কমে।
হাড়ের শক্তি বাড়ায়
যদিও শাকসবজিতে ভিটামিন ডি পাওয়া যায় না, মাশরুম ভিটামিন ডি সমৃদ্ধ, যা ক্যালসিয়াম এবং ফসফরাসের শোষণ বাড়াতে সাহায্য করে। ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ হওয়ায় এটি আমাদের হাড়ের মজবুত বাড়াতেও সাহায্য করে। তাই জয়েন্টের ব্যথা কমাতে এবং হাড়ের বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে মাশরুমের তুলনা নেই।
ত্বক সুস্থ রাখা
ভিটামিন নিয়াসিন এবং রিবোফ্লাভিন সমৃদ্ধ হওয়ায় মাশরুম ত্বকের জন্য খুবই উপকারী। তাছাড়া এতে প্রায় ৮০-৯০ শতাংশ পানি থাকায় এটি ত্বককে কোমল ও কোমল রাখতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
ক্যান্সার প্রতিরোধ করে
মাশরুমের ফাইটোকেমিক্যাল টিউমার বৃদ্ধিতে বাধা দেয়। স্তন এবং প্রোস্টেট ক্যান্সারের মতো বিভিন্ন ক্যান্সার প্রতিরোধে মাশরুম অতুলনীয়।
এটি একটি পরিপূরক খাবার হলেও অন্যান্য খাবারের সাথে রান্না করলে এর স্বাদ বহুগুণ বেড়ে যায়। মাশরুমের উপকারিতা, যা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তা অক্ষয়। তাই আসুন বেশি করে মাশরুম খাই এবং শরীরকে রোগ প্রতিরোধক করে তুলি।