![]() |
It's Zia |
চিনাবাদাম
বাদাম আমাদের প্রিয় খাবার। আর এই বাদামে রয়েছে হাজারো গুণ। চিনাবাদামে রয়েছে প্রোটিন, ফাইবার, ক্যালসিয়াম, আয়রন, সোডিয়াম, পটাশিয়াম, ভিটামিন-এ, বি, সি। আর এই ভিটামিন আমাদের শরীরের জন্য খুবই উপকারী।
উপকারিতা
* প্রোটিনের সম্পূর্ণ উৎস। সকালে খালি পেটে বাদাম খেলে এনার্জি পাওয়া যায়।
* নিয়মিত পরিমিত পরিমানে বাদাম খাওয়া হার্টের জন্য ভালো।
* রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
আখরোট
আমাদের দেশে আখরোট কম পাওয়া যায়। এই বাদাম শরীরের হাড় মজবুত করতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, আয়রন, পটাশিয়াম, ফসফরাস, সোডিয়াম, ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড ভিটামিন।
উপকারিতা
* হাড় মজবুত করে।
* মস্তিষ্কের পুষ্টি যোগায়।
পেস্তা বাদাম
রান্নায় পেস্তা ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। খাবারে যোগ করলে খাবার সুস্বাদু হয়। এটি রক্ত বিশুদ্ধ করতেও কাজ করে। এতে ফসফরাস, পটাসিয়াম, সোডিয়াম, কপার, ম্যাগনেসিয়াম, ভিটামিন রয়েছে।
উপকারিতা
* রক্ত বিশুদ্ধ করে।
* লিভার ও কিডনি ভালো রাখে।
কাজু বাদাম
কাজুবাদাম খেতে খুবই সুস্বাদু। কাজুবাদামে রয়েছে আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম। এতে ভিটামিন এও রয়েছে যা রক্তাল্পতা দূর করে এবং ত্বক উজ্জ্বল করতেও সাহায্য করে। এটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতেও সাহায্য করে। কিডনি বা কিডনি আকৃতির কাজুবাদামের রয়েছে অনেক স্বাস্থ্য উপকারিতা। চলুন আজ জেনে নিই সেই সুবিধাগুলো সম্পর্কে।
১. হার্ট সুস্থ রাখে কাজুবাদামে ভালো চর্বি থাকে এবং কোলেস্টেরল থাকে না। কাজু বাদাম খারাপ কোলেস্টেরলের এলডিএল মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। অনেকেই মনে করেন যে চর্বি কমানো শরীরের জন্য ভালো, কিন্তু এটি সত্য নয়। একটি সুস্থ শরীরের জন্য সমস্ত খাদ্য গ্রুপ থেকে পুষ্টি প্রয়োজন, এমনকি চর্বি। এটি কাজুবাদামের মতো ভাল উত্স থেকে নেওয়া উচিত। তাছাড়া কাজুতে অলিক অ্যাসিড থাকে যা হার্টের জন্য খুবই উপকারী।
২.শক্তিশালী হতে সাহায্য করে কাজুবাদামে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম রয়েছে যা মজবুত হাড়, পেশী এবং স্নায়ুর সঠিক কার্যকারিতার জন্য অপরিহার্য। হাড়ের মধ্যে ক্যালসিয়াম শোষণ করার জন্য আমাদের শরীরের দৈনিক৩০০-৭৫০ গ্রাম ম্যাগনেসিয়াম প্রয়োজন। আর কাজুতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম। তাই বেশি করে কাজুবাদাম খাওয়া উচিত।
৩. রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে কাজুবাদাম ভিটামিন সমৃদ্ধ। এছাড়াও এটি পটাশিয়াম সমৃদ্ধ। কিন্তু এই বাদামে সোডিয়াম কম। পটাশিয়াম বেশি থাকায় রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে অনেক সাহায্য করে। ফলে রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে প্রচুর পরিমাণে কাজুবাদাম খেতে হবে।
৪. ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় কাজু বাদামে সেলেনিয়াম এবং ভিটামিন ই রয়েছে যা ফ্রি র্যাডিক্যাল অক্সিডেশন প্রতিরোধ করে। যার ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায় এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। কাজুও জিঙ্ক সমৃদ্ধ হওয়ায় সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সাহায্য করে।
৫. শরীরের বিভিন্ন কাজে এটি একটি প্রধান ভূমিকা পালন করে কাজুবাদামেও রয়েছে উচ্চমাত্রার কপার। অতএব, যেহেতু কাজুতে উচ্চ মাত্রার কপার থাকে, তাই এগুলি এনজাইম কার্যকলাপ, হরমোন উৎপাদন এবং মস্তিষ্কের কার্যকারিতায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি রক্তাল্পতা প্রতিরোধে সাহায্য করে কারণ এটি লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদনে সাহায্য করে।
যেহেতু কাজুতে ক্যালোরি বেশি, তাই প্রতিদিন ৫-১০টি কাজু বাদাম খাওয়াই যথেষ্ট। যাদের অ্যালার্জি এবং মাইগ্রেন আছে তাদের খাওয়া উচিত নয়। বিভিন্ন ধরনের কাজু বাদাম পাওয়া যায় যেমন লবণাক্ত, সিদ্ধ বা মশলাযুক্ত। উচ্চ রক্তচাপের রোগীদের লবণযুক্ত কাজু খাওয়া উচিত নয়।
কাঠ বাদাম
কাঠবাদাম একটি অত্যন্ত জনপ্রিয় এবং সস্তা ফল। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘বি’, ‘ই’, ‘ডি’ এবং উপকারী চর্বি। এর গুণাগুণ বিবেচনায় একে সুপার ফুড বলা হয়। কাঠবাদামে থাকা ভিটামিন ‘বি’ মস্তিষ্কের কোষের উন্নতি ও স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। প্রতিদিন কাঠবাদাম খেলে শিশুদের স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি প্রখর হবে। পানিতে ভিজিয়ে বাদাম খোসা ছাড়িয়ে খান। তবে তা তেলে ভাজা এবং লবণমুক্ত হতে হবে।এর ফাইটোস্টেরল এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা কাঠবাদাম প্রোটিন এবং ফাইবার এছাড়াও ক্ষুধা নিবারণ করতে সাহায্য করে। এর ফলে সহজে ওজন কমে যায়। এছাড়াও, কাঠবাদামের উপাদান শরীরকে চর্বি শোষণ করতে দেয় না। ফলে এই চর্বি বেরিয়ে আসে। আখরোটে থাকা ভিটামিন 'ডি' এবং ম্যাগনেসিয়াম চুল পড়া রোধ করতে এবং মাথার ত্বকের উন্নতিতে সাহায্য করে। এর ভিটামিন 'ই' ত্বকের রুক্ষতা ও শুষ্কতা দূর করতে খুবই উপকারী। আখরোটের রস ব্যবহারে ত্বক মসৃণ, সুন্দর এবং উজ্জ্বল হয়।
স্মৃতিশক্তি প্রখর করে কাঠবাদাম
চিনাবাদাম ভিটামিন বি সমৃদ্ধ। যা মস্তিষ্কের কোষকে উন্নত করতে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ছোটবেলা থেকেই প্রতিদিন চিনাবাদাম খাওয়ার অভ্যাস করে ফেললে শিশুদের স্মৃতিশক্তি অনেক বেশি প্রখর হয়। তবে অবশ্যই ভাজা লবণযুক্ত বাদাম খাওয়া উচিত নয়। পানিতে ভিজিয়ে খেতে হবে।
দ্রুত ওজন কমাতে কাঠবাদাম
কাঠবাদামে রয়েছে ফাইটোস্টেরল এবং মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড যা শরীরের ক্ষতিকর কোলেস্টেরল কমাতে সাহায্য করে। কাঁচা কাঠবাদাম প্রোটিন এবং ফাইবারের উৎস যা দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষুধার্ত করে না। এবং কম ক্ষুধা। এটি শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।
চুলের যত্নে কাঠবাদাম তেল
চুল পড়া, চুলের রুক্ষতা এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য বাদাম তেলের কোন মিল নেই। বাদামে থাকা ভিটামিন ডি এবং ম্যাগনেসিয়াম চুল পড়া রোধ করে এবং মাথার ত্বকের উন্নতি করে। এই তেল সরাসরি চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
ত্বকের সুস্থতায় কাঠবাদামের দুধ
বাদামে থাকা ভিটামিন ই ত্বকের রুক্ষতা ও শুষ্কতা দূর করতে খুবই কার্যকরী। বাদামের দুধ ত্বকের জন্য প্রাকৃতিক ময়েশ্চারাইজার হিসেবে কাজ করে। বাদাম গুঁড়ো করে সহজেই দুধ বের করা যায়। এই দুধ সরাসরি ত্বকে লাগালে ত্বক মসৃণ, সুন্দর এবং উজ্জ্বল হয়।
আরো কিছু কাঠ বাদামের গুনাগুন
১. চিনাবাদামে থাকা মনোস্যাচুরেটেড ফ্যাট, প্রোটিন এবং পটাসিয়াম হার্টকে সুস্থ রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
২. আখরোটের ভিটামিন ই বিভিন্ন হৃদরোগ প্রতিরোধ করে। বাদামে উপস্থিত ম্যাগনেসিয়াম হার্ট অ্যাটাক প্রতিরোধ করে এবং পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে।
৩. বাদামে একটি বিশেষ ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট 'ফ্ল্যাভোনয়েড' থাকে, যা বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে খুবই কার্যকরী। চিনাবাদাম কিছু ধরণের ক্যান্সার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
৪. চিনাবাদাম বি ভিটামিন সমৃদ্ধ। ভিটামিন বি মস্তিষ্কের কোষের বিকাশে সাহায্য করে এবং স্মৃতিশক্তি বাড়াতে সাহায্য করে। ছোটবেলা থেকে প্রতিদিন চিনাবাদাম খেলে শিশুদের স্মৃতিশক্তি প্রখর হয়।
৫. চিনাবাদাম ফাইবার সমৃদ্ধ, যা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে।
৬. মেনোপজ-পরবর্তী মহিলাদের নিয়মিত চিনাবাদাম খাওয়া উচিত। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম যা মেনোপজের সমস্যা দূর করতে সাহায্য করে।
৭. কাঁচা চিনাবাদাম প্রোটিন এবং ফাইবারের উৎস যা ক্ষুধা দমন করে। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে।
৮. চুল পড়া, চুলের রুক্ষতা এবং মাথার ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য বাদাম তেলের কোন মিল নেই। আখরোটে থাকা ভিটামিন ডি এবং ম্যাগনেসিয়াম চুল পড়া রোধ করে এবং মাথার ত্বকের উন্নতি করে। এই তেল সরাসরি চুলে লাগিয়ে এক ঘণ্টা রেখে চুল ধুয়ে ফেলুন।
৯. বাদাম গুঁড়া খুব ভালো স্ক্রাবার হিসেবে কাজ করে। বাদাম বেটে মধু মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক উজ্জ্বল ও কোমল হয়।
আমন্ড
আমন্ড বাদামের রাজা। এই বাদামের রয়েছে অনেক উপকারিতা। এ কারণেই এই বাদামকে বাদামের রাজা বলা হয়। ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফলিক অ্যাসিড এবং ভিটামিন ই।
উপকারিতা
* শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠকাঠিন্য এবং ত্বকের বিভিন্ন সমস্যার জন্য খুবই ভালো। সব বাদামের মধ্যে বাদামে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি।
* নিয়মিত চার থেকে পাঁচটি বাদাম খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল বা খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে। ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে না।
* কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।
* অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে। কেমোথেরাপির সময় বাদাম দুধ খেলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা উন্নত হয়।
* বাদামে থাকা ফাইবার শরীরে কার্বোহাইড্রেটের শোষণকে ধীর করে দেয়। ফলে এটি ডায়াবেটিসের জন্য উপকারী।
* নিয়মিত বাদামের পেস্ট লাগালে বলিরেখা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
বাদামের অপকারিতা
বিভিন্ন রোগ সারাতে বাদামে রয়েছে নানা পুষ্টি উপাদান ও ভিটামিন। এতে কোনো ক্ষতিকারক উপাদান থাকে না, তবে বেশি খেলে মাঝে মাঝে হালকা মাথাব্যথা হতে পারে। তাই নিয়মিত খান। তবে পরিমিত পরিমাণে খান। তাছাড়া বাদামে অনেক ভিটামিন রয়েছে।