![]() |
Wikimedia Commons |
রসালো ফল লিচু। এতে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল এবং ভিটামিন রয়েছে। ডায়েট চার্টে পর্যাপ্ত পরিমাণে লিচু রাখা যেতে পারে।ছয় ঋতুর এ দেশে বিভিন্ন ঋতুতে পাওয়া যায় নানা পুষ্টিকর মৌসুমি ফল। যা মানবদেহের পুষ্টির চাহিদা পূরণে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তেমনই একটি ফল হল লিচু। এই রসালো ফলটিতে রয়েছে প্রচুর খনিজ পদার্থ। এ ছাড়া এতে খুব কম প্রোটিন এবং কার্বোহাইড্রেট থাকে। চর্বি ছাড়াই সবার জন্য ভালো একটি ফল। এছাড়াও, এতে ক্যালোরি কম, তাই এটি সবার জন্য উপযুক্ত। কিন্তু যারা ডায়াবেটিক তাদের জন্য এই ফলটি একটু কম খাওয়াই ভালো।লিচুতে রয়েছে এপিকেটচিন এবং রুটিনের মতো দুটি অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট যৌগ, যা এই গরমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করবে। লিচুর গ্লাইসেমিক ইনডেক্স ৫০, যার কারণে চিনি ধীরে ধীরে রক্তে প্রবেশ করে। এবং গ্লাইসেমিক লোড ৭.৬, যা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য নিরাপদ। এছাড়া এতে থাকা ফাইবার রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।ডায়াবেটিস রোগীরা তাদের খাবারে ৪০গ্রাম লিচু বা ৬টি বড় লিচু খেতে পারেন যদি তাদের চিনি নিয়ন্ত্রণে থাকে। এটিতে প্রায় ২৫গ্রাম ক্যালোরি রয়েছে। ডায়াবেটিস রোগীরা বেশি করে লিচু খেতে চাইলে রক্তে শর্করার মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে। আবারও খেয়াল করতে হবে, সেদিন তিনি কতটা চিনি নিয়েছেন। পুষ্টিবিদদের মতে, শুধু ডায়াবেটিস নয়, একজন সুস্থ মানুষেরও বেশি লিচু খাওয়া উচিত নয়। আর মনে রাখবেন, খাওয়ার পরে এবং ঘুমাতে যাওয়ার আগে ফল খাওয়া উচিত নয়।কারণ, এটি রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
![]() |
Pexels |
লিচুতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম। এ ছাড়া এতে থাকা অন্যান্য খনিজগুলো হলো আয়রন, ফলিক অ্যাসিড, ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম; যা লিচুতে প্রচুর। এ কারণে প্রতিদিনের পুষ্টির চাহিদা পূরণে লিচু খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই যতটা সম্ভব মৌসুমি ফল খাওয়া আমাদের জন্য খুবই উপকারী। তবে লিচুর অত্যধিক ব্যবহার ওজন বৃদ্ধি, চিনির মাত্রা বৃদ্ধি এবং পেট খারাপ হতে পারে।কারো কারো লিচুতে অ্যালার্জি থাকে, তাই ফলটি এড়িয়ে চলাই ভালো। তাই নিয়ম অনুযায়ী মৌসুমি ফল পরিমাণে খাওয়া উচিত। প্রয়োজনে পুষ্টিবিদের পরামর্শ নিন। কারণ, এতে আপনি আপনার ডায়েট চার্টে প্রয়োজনীয় মৌসুমি ফলের সঠিক পরিমাণ জানতে পারবেন।
লিচুর পুষ্টিগুণ:
- প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুর ক্যালরির মান হল ৭৯ কিলোক্যালরি। ডায়াবেটিস রোগীদের পরিমিত মাত্রায় লিচু খাওয়া উচিত কারণ এতে ক্যালরির পরিমাণ বেশি। ১০০ গ্রাম লিচুতে ৬৬ ক্যালরি, ১৬.৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০.৪ গ্রাম চর্বি এবং ০.৪ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে। প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ১.১ গ্রাম প্রোটিন এবং ০.২ গ্রাম ফ্যাট থাকে।লিচু প্রোটিন সমৃদ্ধ।
- প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ১৩.৬ গ্রাম সাদা চিনি থাকে। এছাড়াও, লিচুতে রয়েছে ০.০২ গ্রাম ভিটামিন বি১ এবং ০.০৬ গ্রাম বি২। এতে কিছু খনিজ লবণও রয়েছে।
- প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ০.৫ গ্রাম খনিজ লবণ থাকে।
- প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ৩১মিলিগ্রাম ভিটামিন সি থাকে।
- প্রতি ১০০ গ্রাম লিচুতে ১০ মিলিগ্রাম ক্যালসিয়াম থাকে। ক্যালসিয়াম শরীরে হাড় গঠনে সাহায্য করে এবং হাড়ের স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে। লিচুতে অল্প পরিমাণে আয়রন থাকে। প্রতি ১০০ গ্রাম আয়রন ০.৭ মিলিগ্রাম।
- প্রতি ১০০ গ্রাম লিচু থেকে ৬১ কিলোক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
এছাড়াও লিচুতে থায়ামিন, নিয়াসিন ইত্যাদি রয়েছে যা লিচুর পুষ্টিগুণ আরও বাড়িয়ে দেয়। এই ভিটামিন শরীরের মেটাবলিজম বাড়ায়। লিচু শক্তির একটি ভালো উৎস। লিচুতে রয়েছে ভিটামিন সি যা ত্বক, দাঁত ও হাড়ের জন্য ভালো।
ভিটামিন সি বিভিন্ন চর্মরোগ ও স্কার্ভি দূর করতে সাহায্য করে। তাছাড়া এটি ত্বককে উজ্জ্বল করতে এবং বলিরেখা কমাতেও সাহায্য করে।
এটি শরীরে কোলেস্টেরলের মাত্রা কমায়। এছাড়াও চর্বি কমাতে সাহায্য করে।
লিচুতে রয়েছে ডায়েটারি ফাইবার, ভিটামিন এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরে জমা হয় এবং শরীরকে সুস্থ রাখে।
লিচুতে রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এবং অন্যান্য খনিজ উপাদান যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
লিচুর স্বাস্থ্য উপকারিতা
১. লিচু ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য খুব ভালো কারণ এতে ক্যালরি বেশি থাকে।
২. লিচু শরীরের শক্তি বাড়ায়, কারণ এটি শরীরে তরলের পরিমাণ বাড়ায়।
৩. কমলালেবুর তুলনায় লিচুতে ভিটামিন সি-এর পরিমাণ ৪০ শতাংশ বেশি।
৪. এই ফলটিতে আনস্যাচুরেটেড ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে।
৫. লিচু বিটা ক্যারোটিন সহ প্রয়োজনীয় ভিটামিন শোষণে সাহায্য করে।
৬. এটি হজমে সাহায্য করে, কারণ লিচুতে রয়েছে কার্বোহাইড্রেট এবং ফাইবার।
৭. লিচুতে গাজরের চেয়ে বেশি বিটা-ক্যারোটিন রয়েছে।
৮. লিচুতে থাকা ক্যালসিয়াম হাড়, দাঁত, চুল, ত্বক, নখ সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
৯. এটি ত্বক এবং চুলের পুষ্টি যোগায়।
১০. এতে নিয়াসিন এবং রিবোফ্লাভিন নামক ভিটামিন 'বি' কমপ্লেক্স রয়েছে।
১১. লিচুর ভিটামিন 'এ' রাতের বেলা কর্নিয়ার রোগ, ফোলা চোখ, ফোলাভাব এবং চোখের কোণে লালভাব দূর করে।
১২. লিচুতে থাকা পটাসিয়াম এবং খনিজ উপাদান হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়। রক্ত চলাচল স্বাভাবিক রাখে এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে।
১৩. এটি মস্তিষ্কের বিকাশেও সাহায্য করে। এছাড়া আমাদের হার্ট সুস্থ থাকে, স্ট্রোকের ঝুঁকি কমায়।
১৪. লিচু মানবদেহকে ক্যান্সার থেকেও রক্ষা করে। এটি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী কোষকে ধ্বংস করে। এতে উপস্থিত ফ্ল্যাভোনয়েড বা ভিটামিন 'পি' স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধ করে।
রেফারেন্সঃ prothomalo.com/
dainikazadi.net