![]() |
It's Zia |
বারডেম হাসপাতালের প্রধান পুষ্টি কর্মকর্তা (অবসরপ্রাপ্ত) আখতারুন নাহার আলো গরুর মাংসের বিভিন্ন উপকারী উপাদান ও এর কার্যকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেছেন।
গরুর মাংসে রয়েছে আয়রন, ফসফরাস, ভিটামিন বি১ এবং ভিটামিন বি২। বেশিরভাগ চর্বি বাইরের দিকে থাকে। আর মাটন ও মাটনে রয়েছে প্রচুর চর্বি।
এ কারণে এসব মাংস থেকে চর্বি অপসারণ করা কঠিন হয়ে পড়ে।
তবে গরুর মাংসের চেয়ে গরুর মাংস হজম করা সহজ। মাংসে স্যাচুরেটেড ফ্যাট থাকলেও লাল মাংস এবং লিভারে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। এ কারণে রক্তশূন্যতায় গরুর মাংস খুবই কার্যকরী।
কোষের ক্ষতি পূরণের জন্য সব বয়সের মানুষের মাংস প্রয়োজন। শরীরে প্রোটিন বা আমিষের ঘাটতি পূরণের জন্য এবং ওজন বাড়াতে গরুর মাংস খুবই উপকারী।
এ ছাড়া পর্যাপ্ত জিঙ্ক থাকার কারণে শরীরের ক্ষত ও পোড়া সারানোর জন্য লাল মাংসের প্রয়োজন হয়।
ঘামের সাথে ক্রীড়াবিদদের শরীর থেকে জিঙ্কও নির্গত হয়। সে কারণে তাদের খাবারে মাংস রাখা যেতে পারে।
এটা দেখা যায় যে নিরামিষাশীদের জিঙ্কের ঘাটতি রয়েছে। পেশির শক্তি বাড়াতে মাংসের কোনো মিল নেই। শিশু, গর্ভবতী মহিলা এবং স্তন্যদানকারী মায়েদের অন্যদের তুলনায় আমিষ বেশি প্রয়োজন।
নিম্নবিত্তদের সবসময় প্রোটিনের ঘাটতি থাকে। যদি তাদের ইচ্ছা থাকে, তারা কোরবানি দিয়ে সেই অভাব পূরণ করতে পারে। মাংসের চর্বি শুধুমাত্র পুষ্টির অভাব পূরণ করে না-এটি ভিটামিনও সরবরাহ করে।
তবে সতর্কতার বিষয় হলো মাংসে থাকা রোগজীবাণু শরীরে বিষ তৈরি করে। এ কারণে রোগাক্রান্ত পশুর মাংস খেলে অসুস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই যারা ঈদে কুরবানী করবেন তারা এ ব্যাপারে সতর্ক থাকবেন।
ঈদুল আজহায় গরু বা ছাগল কোরবানি করা হয়। মাংসের একটি অংশ আত্মীয়-স্বজন ও গরীবদের সাথে ভাগ করে নিজেদের জন্যও রাখা হয়। কোরবানির মাংস থেকে অনেক সুস্বাদু খাবার তৈরি করা হয়। সেসব খাবার থেকে লোভ নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন। গরুর মাংস ক্ষতিকর বলে অনেকেই খেতে ভয় পান।
গরুর মাংস কি সত্যিই ক্ষতিকর? গরুর মাংসে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় নয়টি পুষ্টি উপাদান রয়েছে। সেগুলো হল প্রোটিন, জিঙ্ক, ভিটামিন বি১২, সেলেনিয়াম, আয়রন, রিবোফ্লাভিন, ফসফরাস, নিয়াসিন এবং ভিটামিন বি৬। উপকারের পাশাপাশি গরুর মাংসের কিছু অসুবিধাও রয়েছে। জেনে নিন গরুর মাংস খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতা-
গরুর মাংসের উপকারিতা
শিশুর বৃদ্ধিতে সাহায্য করে
গরুর মাংস খাওয়া আমাদের বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশ, শারীরিক বৃদ্ধি এবং রক্ত বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংসে প্রতিদিনের চাহিদার ১২৫ শতাংশ ভিটামিন বি 12, ৯০ শতাংশ প্রোটিন, ৩২ শতাংশ আয়রন, ২৯ শতাংশ নিয়াসিন, ৭৪ শতাংশ জিঙ্ক, ৪২ শতাংশ সেলেনিয়াম, ৩২ শতাংশ ভিটামিন বি6, ২৩ শতাংশ রিবোফ্লাভিন রয়েছে। এবং ৯-১৩ বছর বয়সী শিশুর জন্য ১৬ শতাংশ ফসফরাস। .
খনিজ ঘাটতি দূর করে
গরুর মাংস শরীরে মিনারেলের অভাবজনিত রোগ দূর করতে কাজ করে। কারণ এটি খনিজ লবণের একটি বড় উৎস। গরুর মাংসে জিঙ্ক, ফসফরাস, সেলেনিয়াম এবং প্রচুর আয়রন থাকে। এই মাংস ভিটামিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস। গরুর মাংস ভিটামিন B-3, B-6, B-12 ইত্যাদি ভিটামিন সরবরাহ করে।
প্রোটিনের ভালো উৎস
গরুর মাংস প্রোটিনের ভালো উৎস। আমিষ ছাড়াও হাড়, লিভার, মস্তিষ্ক ইত্যাদি থেকে প্রোটিন আসে। এই প্রোটিন থেকে প্রাপ্ত অ্যামাইনো অ্যাসিড হাড় ও পেশি সুস্থ রাখতে উপকারী। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২২.৬ গ্রাম প্রোটিন থাকে।
জিঙ্কের ঘাটতি দূর করে
জিঙ্ক আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য একটি অপরিহার্য উপাদান। এটি আমাদের শরীরের কোষকে সুস্থ রাখে এবং রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেলে দৈনিক জিঙ্কের ৩৯ শতাংশ পাওয়া যায়।
গরুর মাংসের অসুবিধা
কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়
অনেকেই অতিরিক্ত গরুর মাংস খান। এটি কোষ্ঠকাঠিন্যের ঝুঁকি বাড়ায়। কোষ্ঠকাঠিন্য পরবর্তীতে আরও গুরুতর অসুস্থতার কারণ হতে পারে। তাই অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া এড়িয়ে চলুন। গরুর মাংসের সঙ্গে বিভিন্ন ধরনের সবজি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা যায়।
কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি
অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া মোটেও উপকারী নয়। তাই খাওয়া যতই ভালো হোক না কেন, গরুর মাংস খেতে হবে পরিমিত পরিমাণে। চিকিৎসকদের মতে, সপ্তাহে পাঁচবার গরুর মাংস, গরুর মাংস বা ভেড়ার মাংস খেলে কোলন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ে। এছাড়াও প্রক্রিয়াজাত লাল মাংস খাওয়া মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায়।
হৃদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি
আপনি হয়তো জানেন, গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। কারণ এতে থাকা অতিরিক্ত সোডিয়াম শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে। কারণ সোডিয়াম রক্তচাপ তৈরি বা বাড়াতে কাজ করে। তাই গরুর মাংস খেলে উচ্চ রক্তচাপ হতে পারে। সেখান থেকেই হৃদরোগ ও স্ট্রোকের মতো সমস্যা দেখা দেয়।
গরুর মাংস আপনি কতটুকু খেতে পারবেন?
আপনি প্রতিদিন ৮৫ গ্রাম গরুর মাংস খেতে পারেন। ৮৫ গ্রাম চর্বিহীন গরুর মাংস খেলে আপনার দৈনিক ক্যালোরির চাহিদার ১০ শতাংশ পূরণ হবে। ৩ টুকরা রান্না করা মাংসে ৮৫ গ্রাম থাকে, তাই দিনে ৩ টুকরার বেশি মাংস না খাওয়ার চেষ্টা করুন। একবারে বেশি মাংস খাওয়ার ভয় থাকলে সপ্তাহে দুই দিনের বেশি গরুর মাংস না খাওয়াই ভালো।